সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

নেশা – মোফাজ্জল করিম

বাপজান আশা করি কুশলেই আছেন, 
পরসমাচার এই যে, 
সেদিন আপনি যে কাজটা করিলেন 
তার জন্য এই পত্রটি না লিখিয়া পারিতেছিনা 
দেখিতেছি যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই আপনার কাণ্ডজ্ঞান 
একে বারেই লোপ পাইতেছে। 
আপনি কি করিয়া সেদিন আমার ড্রয়ইংরুমে, 
অর্থাৎ বৈঠকখানায় বেমোক্কা ঠুকিয়া পড়িলেন, 
বুঝিলামনা 
সারাগায়ে ঘামের গন্ধ, ময়লা তেল চিপচিপে পাঞ্জাবী, 
বগলে ছেঁড়া ছাতা, মাথায় চিতিপড়া কিস্তি টুপি, 
যেনো আকবর বাদশার উর্নিশ আর কি। 
হাতে মাটির হাড়ি, সর্বোপরি দু’পায়ের চামড়ার 
কুচ কুচে কালো রং, বোধ হয় লজ্জায় ঢাকিয়া ফেলিবার 
আশায়, রাস্তার সবটুকু ধুলি মাখাইয়া 
পা দু’টিকে মনে হইতেছিলো চুনকাম করাইয়াছেন। 
কি লজ্জা, আপনার ঐ মুর্তি দেখিয়া আমার বন্ধুগন 
এবং তাদের সুন্দরী স্ত্রীরা, বজ্রাহতের মতো তাকাইয়া রহিলো। 
যেনো তাহারা চাক্ষুস ভুত দেখিতেছে 
আর আমার অবস্থাটা একবার ভাবিয়া দেখুন, 
মান, সম্মান, মর্যাদা সব জাহান্নামে গেলো, 
তাও-না হয়, আপনি যদি দয়া করিয়া একটু চুপ থাকিতেন 
তবু একটা কথা ছিলো। 
তা-না, আপনার আবার আহাল্লাদে মুখদিয়া 
কথার ফোয়ারা ছুটিতে লাগিলোঃ 
বাবা কেমোন আছো, বৌমা কোথায়, 
বলিহারি ভাগ্যিস সেই মুহূর্তে ও সেখানে ছিলো না 
থাকিলে সে বেচারির হার্ট এটাক হইয়া যাইতো, 
সেতো আবার হঠাৎ কোনো খারাপ দৃশ্য 
মোটেই সহ্য করিতে পারেনা, 
বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ কিনা। 

বাপজান তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি 
আর যাই করো, এইভাবে আমাকে ডুবাইয়োনা 
টাকা-পয়সা লাগিলে চিঠি দিও পারিলে পাঠাইবো, 
আর অতো টাকা পয়সাও যে কেনো লাগে তোমাদের তাও বুঝি না। 
তোমাদের আবার অতো খরচ কিসের 
ক্লাবে যাওনা, পার্টি দাওনা 
ইসুবগুল, আর চিরতার পানি ছাড়া 
আরতো কোনো নেশাও কর না। 

এইটুকু পড়িয়া দরিদ্র স্কুল মাস্টার 
পিতা আনমনে বলিয়া উঠিলেন : 
না, না, ভুল বললিরে বাবা 
নেশা একটা আছে, বড় পুরোনো নেশা 
কিছুতেই ছাড়তে পারিনা সেই নেশা 
তোর জন্মের পর থেকে সারাক্ষণ তোকে দেখার নেশা 
কিছুতেই ছাড়তে পারি না বাপ, কিছুতেই ছাড়তে পারি না। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন