বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৬

তিন পাহাড়ের স্বপ্ন 

 বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

 সাঁওতাল মেয়েদের গান
পাহাড়িয়া মধুপুর , মেঠো ধূলিপথ
দিনশেষে বৈকালি মিষ্টি শপথ;
‘মোহনিয়া বন্ধুরে! আমি বালিকা
তোরই লাগি গান গাই, গাঁথি মালিকা।
‘আজো সন্ধ্যার শেষে খালি বিছানা;
আমি শোব , পাশে মোর কেউ শোবে  না---
তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না।’
সুরে সুরে হাওয়া তার মিষ্টি বুলোয়;
সাঁওতাল মেয়ে-কটি দৃষ্টি ভুলায়;
দিন শেষ---ধুধু মাঠ—ধুধু মেঠো পথ
সাঁওতাল মেয়ে-কটি ছড়ালো শপথ!
হাওয়ায় হাওয়ার মতো তাদের শপথ!
(ধীরে মাদল)
আয় মিতেনী, আজ রাতে
চাঁদকুড়োনো মাঝ রাতে
আবছা আলোর কান্নাতে
মুখ রেখে তুই ঝর্ণাধারে  আয়!
আয় জোয়ানের মন –জ্বালা
নাচ দিয়ে সই, গাঁথ মালা---
চুমুর গেলাস মদ ঢালা
দে ছুঁড়ে দে, তিন পাহাড়ের গায়।
 (জোরে মাদল)
আহা মাদল , মাতাল মাদল বাজছে তোরই জন্যে লো!
খুশির হাওয়া, পাগলা হাওয়া গান দিল রাজকন্যে লো!
আয়, কাছে আয়, মন দে লো!
চোখ কেন তোর কাঁপছে মেয়ে
বুক কেন তোর দুলছে?
গাল দুখানি লালচে , শরীর
সাপের মতোই ফুলছে?
            কাকে মারবি ছোবল লো?
            কোন ছেলে তোর কী করলো!
মাদল ভেবে কেউ কি তোকে
আজকে বাজালো?
ফুল দিয়ে নয় , ফাগ ছড়িয়ে
বিকেল সাজালো?
কেমন দিবি সাজারে?
আর যাবি না পাহাড়ে!
এত গান আকাশে
এত গান বাতাসে!
            সাঁওতাল মেয়েটির টিপ কপালে
ছেলেটি পেছন তবু নিল কী-বলে?
রাঙা-ফুল মেয়েটির খোঁপায়  জ্বলে
ছেলেটি বাজালো বাঁশি তবু কী-ব’লে?
এত মদ আকাশে
এত মদ বাতাসে!
            নেশা যেন ধ’রে যায় ছেলেটির বাঁশিতে
            মনে হয় দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে,
            তবে চাঁদ সরে যাও, যাও তা হলে
            ‘ও ছেলে, পেছন তুই নিলি কী বলে?’
            ‘পথ ভুলে গেছি মেয়ে খিলখিল হাসিতে;
            শোন, কোনো দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে।’
এত আলো আকাশে
এত আলো বাতাসে!

1 টি মন্তব্য: